মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৪ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা কাজী আরেফ আহমেদের তিন খুনির মধ্যে আজ রাত ১১টার দিকে ২ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে এদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
তার আগে রাত সাড়ে ৯টায় কারাগারে ঢোকেন জেলা সিভিল সার্জন শাহাদৎ হোসেন। ১০টা ২০ মিনিটের দিকে ঢুকতে দেখা যায় জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীর ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল হাসানকে। এর পাঁচ মিনিট পর যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান কারাগারে ঢোকেন। রাত ১১টা ১ মিনিটে দুজন এবং ৪৪ মিনিট পর আরেকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে বলে কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। যশোর কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক শাহজাহান আহম্মেদ বৃহস্পতিবার রাতে দণ্ড কার্যকর হবে বলে আগেই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত তিনজন হলেন-কুষ্টিয়ার মীরপুর উপজেলার রাজনগর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে সাফায়েত হোসেন হাবিব, কুর্শা গ্রামের উম্মতের ছেলে আনোয়ার হোসেন এবং আবুল হোসেনের ছেলে রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু। আইনি সব বিষয় নিষ্পত্তি হওয়ার পর বৃহস্পতিবার হাবিব, আনোয়ার ও ঝন্টুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের উদ্যোগ নেয় যশোর কারা কর্তৃপক্ষ। ঢাকা থেকে তানভীর হাসান রাজু ও হযরত আলী নামে দুই জল্লাদকে বুধবার রাতেই যশোর আনা হয় বলে কারা কর্মকর্তারা জানান।
ফাঁসিকাষ্ঠে নেওয়ার আগে কারাগার মসজিদের ইমাম মাওলানা রমজান আলী তিন আসামিকে গোসল করিয়ে তওবা পড়ান। তার আগে একটি মেডিকেল দল আসামিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। ফাঁসির রায় কার্যকরের আগে সংবাদকর্মীদের পাশাপাশি উৎসুক জনতার ভিড় রয়েছে কারা ফটকের সামনে। সেখানে আছে কড়া নিরাপত্তা। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দারাও রয়েছেন। আসামি আনোয়ারের তিন স্বজন দুপুর থেকে কারাগারের সামনে অবস্থান করছেন। বিকালে আনোয়ারের সঙ্গে শেষ দেখা করে এসেছিলেন বলেও জানান তার ভাগ্নে সোহেল। আনোয়ারের ছেলে ডালিম এবং তার ভাই আবদুল হান্নানও কারাফটকে রয়েছেন। ঝন্টুর লাশ নিতে এসেছেন তার চাচাত ভাই আবুল কাশেম, ভাগ্নে খায়রুল ইসলাম ও প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম। হাবিবের লাশ নিতে এসেছেন তার ছেলে মিঠুন মণ্ডল, ছোট ভাই হাসিবুর রহমান। চূড়ান্ত রায়ে আরও দুই আসামি ইলিয়াস হোসেন এবং মান্নান মোল্লারও মৃত্যুদণ্ড হয়। এর মধ্যে ইলিয়াস মারা গেছেন, মান্নান এখনও পলাতক। ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়েছিল জাসদের সাবেক সভাপতি কাজী আরেফকে। চরমপন্থিদের নির্বিচার গুলিবর্ষণে রক্তাক্ত ওই জনসভায় কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, স্থানীয় নেতা ইসরাইল হোসেন ও সমশের মণ্ডলও নিহত হন।
ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির এক সমাবেশে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সঙ্গে কাজী আরেফ আহমেদ (সংগৃহীত ছবি)
মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর নেতা কাজী আরেফ স্বাধীনতার পর জাসদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন, জাতীয় কৃষক লীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমানের আমলে আগের বৈরিতা ভুলে আওয়ামী লীগ-জাসদ ঐক্য প্রতিষ্ঠায় কাজী আরেফের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ‘একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠিত হলে তাতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে জাসদের অংশগ্রহণেও কাজী আরেফের ভূমিকা ছিল। তার স্ত্রী রওশন জাহান সাথী নবম সংসদে আওয়ামী লীগ থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য হয়েছিলেন।